Skip to main content

কর্মক্ষেত্রে ৪০ ভাগ অনুপস্থিতি নিয়ে যা বললেন চিকিৎসকরা


কর্মক্ষেত্রে ৪০ ভাগ চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকেন—দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এমন অভিযোগ মানতে নারাজ চিকিৎসকরা। তাদের মতে, হাসপাতালের চিকিৎসা সিস্টেম ডিউটি রোস্টার মেনে করা হয়, তাই সবসময় শতভাগ চিকিৎসক হাসপাতালে উপস্থিত থাকা সম্ভব নয়। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)একটি পরিসংখ্যানে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের ৪০ শতাংশ অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি উঠে আসায় রাজধানীর চিকিৎসকেরা হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, অন্য সরকারি চাকরিজীবীর চেয়ে চিকিৎসকের দায়িত্ব আলাদা। হাসপাতালের চিকিৎসকের দায়িত্ব ২৪ ঘণ্টা। তাদের ডিউটি ৮টা-আড়াইটার হলেও কাজ কিন্তু সাড়ে ছয় ঘণ্টার নয়। চিকিৎসকসহ অন্যরা মর্নিং,ইভিনিং ও নাইট তিন রোস্টারে ডিউটি করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সিনিয়র চিকিৎসক বলেন, চিকিৎসক সম্পর্কে দেশের মানুষের বিরূপ মনোভাব দেশের চিকিৎসাখাতকে ব্যাহত করছে। এতে করে চিকিৎসকের সন্তানেরা এবং মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই পেশায় আসছে না। এছাড়া, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাতেও অনেক ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। পর্যাপ্ত জনবল না থাকা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকা, দুর্নীতি ও অনিয়ম এই খাতের অনেক কিছুকে ব্যাহত করছে। কিন্তু, এগুলোর অনেক কিছুর সঙ্গেই চিকিৎসকরা সরাসরি জড়িত নন।

চিকিৎসকদের একজন বলেন, যদি এমন ঢালাওভাবে চিকিৎসকদের ওপর দোষারোপ চলতেই থাকে, তাহলে এই দেশের রোগীরা বিদেশি চিকিৎসা ট্যুরিজমের ফাঁদে পড়বে। তারা বিদেশে চিকিৎসা করাতে যাবে এবং সর্বস্বান্ত হবে। এতে করে এই দেশের চিকিৎসাখাত পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।
জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাছির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডিউটি আওয়ারে মোট জনবল তিন ভাগে (রোস্টার) ডিউটি করেন। যারা নাইট ডিউটি করেন, তারা পরদিন আসেন না। এর বাইরেও ছুটি আছে, কোর্স ক্যাডার আছে, অনেক ব্যাপার আছে। তারা যেভাবে বক্তব্য দিয়েছেন এবং সারা বাংলাদেশের মানুষ এই বক্তব্য যেভাবে লুফে নিয়েছেন, এতে আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি। আমরা এত পরিশ্রম করি, সবাই এটা বিশ্বাস করলো না। ঢাকা শহরে আড়াই কোটি মানুষ বাস করে। কিন্তু তাদের চিকিৎসা আসলে কে দেয়? এখানে কোনটা অস্বাভাবিক কাজ হচ্ছে? কিন্তু মানুষ মূল্যায়ন করা তো দূরের কথা অবমূল্যায়ন করে বসে আছে।’

এ কে এম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির হার আমরা সেইভাবে কখনোই প্রত্যক্ষ করি না। আমরা যেটা লক্ষ্য করি, কেউ হয়ত একটু দেরিতে অফিসে এলো। কিংবা কেউ এক ঘণ্টা আগে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গেলো। এখানকার প্রত্যেকটা ইউনিট কোনও না কোনও অধ্যাপকের অধীনে থাকে। তাই সেভাবে অনুপস্থিতি চোখে পড়ে না।’
এ প্রসঙ্গে শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা.উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘চিকিৎসকদের দায়িত্ব অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবীদের মতো নয়টা-পাঁচটা না। এই বিষয়টি সবাইকে অবশ্যই বুঝতে হবে। তা না হলে চিকিৎসকদের সম্পর্কে মানুষের বিরূপ ধারণা থেকেই যাবে। মানুষজন যারা হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেন, তাদের কাছ থেকেই ঠিক তথ্য নেওয়া দরকার। আমাদের বিভাগীয় ও জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে শতভাগ চিকিৎসক উপস্থিত থাকে। তবে,উপজেলা পর্যায়ে কিছু চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকতে পারেন। কারণ,সেখানে বাসস্থান ও নিরাপত্তার খুব সমস্যা। এই সমস্যাগুলো সমাধান না করে এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বললে অন্যায় করা হবে। আবার,চিকিৎসকদের শিক্ষা ছুটি,মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ অন্যান্য ছুটি থাকে। এক্ষেত্রেও অনেকে কর্মক্ষেত্রে থাকেন না।’

অধ্যাপক ডা.উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘শুধু চিকিৎসা পেশাতেই উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হতে হয়। অন্য কোনও পেশায় এই সিস্টেম নেই। এজন্য উচ্চতর শিক্ষার জন্য অনেকেই বর্তমান কর্মক্ষেত্র থেকে যান। কারণ,উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ না করলে কেউ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হতে পারবেন না। তবে,সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেটা বলেছেন,কেউ চাকরি নিয়ে যদি কর্মস্থলে না যান,তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। এই কথার সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত। কেউ চাকরি নিলে তাকে অবশ্যই তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে হবে। তা না হলে তো তার দায়িত্ব পালন হলো না।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. রাজীব দে সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেডিসিন বিভাগে পাঁচজন চিকিৎসক, গাইনিতে পাঁচজন এইভাবে সব বিভাগে চিকিৎসক আছেন। রাতে এলেও দেখা যাবে চিকিৎসক আছেন। এই চিকিৎসক যদি পরদিন সকালে ডিউটি করেন, তাহলে তিনি কোয়ালিটি সার্ভিস দিতে পারবেন না। উপজেলার ক্ষেত্রে আমাদের মোট চিকিৎসক সংখ্যা ২১ জন। এই মুহুর্তে দেশের শতকরা ৯০ ভাগ হাসপাতালে ২১টি পদে চিকিৎসক নেই। রাষ্ট্র মনে করছে হাসপাতাল চালাতে ২১ জন চিকিৎসক লাগে, কিন্তু আছে ১০ জন। তারাই হাসপাতাল চালাচ্ছে। আমি সর্বশেষ যে হাসপাতালটি ছেড়ে এসেছি, সেখানে ১০ জন চিকিৎসক থাকার কথা ছিল; কিন্তু আছে মাত্র ৩ জন। এখন সেখানে যদি হাসপাতালে কেউ যান,শতভাগ উপস্থিতি অবশ্যই পাবেন না। যারা আগের দিন নাইট বা ইভিনিং করে যান,তাদেরকে পরের দিন সকালে না পাওয়ারই কথা। আর এটা নিয়ে যদি বলি চিকিৎসক অনুপস্থিত, তাহলে তো বাংলাদেশের হেলথ সিস্টেমে প্রভাব পড়বে। কারণ, চিকিৎসকরা নাইট ডিউটি করতে চাইবেন না। সবাই সকালে ডিউটি করতে চাইবেন।’

উল্লেখ্য, গত ২১ জানুয়ারি রাজধানীসহ দেশের আট জেলার ১১টি সরকারি হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে হাসপাতালগুলোতে ৪০ শতাংশ চিকিৎসকের অনুপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারপর থেকে এই বিষয়ে নানা মন্তব্য শুরু হয়।

Comments

Popular posts from this blog

Bangladesh Agricultural University — BAU Admission Circular 2018—19

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। বিস্তারিত দেখে নিনঃ আবেদনের নূন্যতম যোগ্যতাঃ ২০১৫/২০১৬ সালে এসএসসি/সমমান এবং ২০১৭/২০১৮ সালে এইচএসসি/সমমানের পরীক্ষায় বিজ্ঞান গ্রুপ থেকে পাশ করতে হবে। এসএসসি/সমমান এবং এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয় ব্যতিত সর্বমোট নূন্যতম জিপিএ ৯.০ পেতে হবে। তবে সকল আবেদনকারীকেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করা হবে না। আবেদনকারীদের মধ্য থেকে মেধার ভিত্তিতে মোট আসন সংখ্যার সর্বোচ্চ ১০ (দশ) গুনক অর্থাৎ সর্বোচ্চ ১২৩০০ (বার হাজার তিনশত) জনকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করা হবে। এসএসসি/সমমান এবং এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় জীববিদ্যা, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিত আলাদা বিষয় হিসেবে থাকতে হবে। আবেদনের সময়সীমাঃ ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ অক্টোবর ২০১৮ তারিখ পর্যন্ত। আবেদনের নিয়মাবলীঃ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য নিম্নবর্ণিত দুইটি পদ্ধতির যে কোন একটির মাধ্যমে আবেদন করা যাবেঃ   অনলাইনের (online) মাধ্যমেঃ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে (http://admission.bau.edu.bd) গিয়ে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করতে হব

সংলাপ স্থগিত, নতুন কর্মসূচি কালো ব্যাজ ধারণ

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত নাগরিক সংলাপ স্থগিত করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর পরিবর্তে ওই দিন কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ খবর জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঐক্যফ্রন্টের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত এই বৈঠক চলে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ৬ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত নাগরিক সংলাপ স্থগিত করা হয়েছে। পরে এর সময়সূচি জানানো হবে। ৩০ ডিসেম্বর ‘ভোট ডাকাতি’ ও ‘প্রহসনের নির্বাচনের’ প্রতিবাদের আগামী বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। মির্জা ফখরুল আরও জানান, আগামী ২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে আয়োজিত শুভেচ্

40th BCS Circular has been published.

৪০ তম বিসিএস নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। সার্কুলার দেখুনঃ ডাউনলোড করে দেখুন- ক্লিক করুন