সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার বা এসএমপি অপারেটরে পড়েছে গ্রামীণফোন। ফলে শিগগিরই নানা বিধিনিষেধের মুখে পড়তে যাচ্ছে অপারেটরটি।
বুধবার টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির কমিশন বৈঠকে জিপিকে এসএমপি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়। এসএমপি ইস্যুতে এই কমিশন বৈঠক দু’দিন ধরে চলছিল।
গ্রাহক ও রাজস্ব দুই ক্যাটাগরিতেই এসএমপিতে পড়েছে তারা। এসএমপি ঘোষিত হতে প্রবিধানমালার যে ৪০ শতাংশ বাজার শেয়ারের সীমা রয়েছে সেখানে এই দুই ক্যাটাগরিতেই জিপির সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
গ্রাহকে অপারেটরটির প্রায় ৪৭ শতাংশ এবং রাজস্বে ৫০ শতাংশের বেশি বাজার দখল রয়েছে।
প্রবিধানমালার তৃতীয় ক্যাটাগরি স্পেকট্রামের বিষয়টি বৈঠকে আলোচনায় আসেনি। কারণ কোনো অপারেটরেরই ৪০ শতংশ স্পেকট্রাম নেই।
বৈঠকে অপারেটরটির ওপর ১০ রকম বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কয়টি আর কোন কোন বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে তা পরের সপ্তাহে বৈঠকের কার্যবিবরণী লিপিবদ্ধের পর নিশ্চিত হবে।
এই ১০ রকম বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে কলরেট ও ডেটার দাম বাড়িয়ে দেয়া, জিপির অফার অন্য অপারেটরগুলো কপি করে নিতে পারলেও সে অন্য কারও অফার কপি করতে পারবে না, প্যাকেজ সংখ্যা কমিয়ে আনা, নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চার্জ আরোপ, কলড্রপের হার অন্য অপারেটরের চেয়ে কম নির্ধারণ করে দেয়া ইত্যাদি।
এসএমপি অপারেটর হওয়ার বিষয়ে বুধবার রাতে গ্রামীণফোন এক বিবৃতিতে জানায়, এসএমপি অপারেটর ঘোষিত হওয়ার বিষয়ে বিটিআরসি হতে এখনো কোনো নির্দেশনা পায়নি তারা, এ বিষয়ে কোনো যোগাযোগও হয়নি।
‘তবে জিপি আশা করে এসএমপির যেকোনো বিধিবিধানে এ খাতের স্বীকৃত ও সেরা উদাহরণগুলো অনুসরণ করা হবে। যেনো খাতটি আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে পারে এবং সবাই মিলে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে’ বলা হয় বিবৃতিতে।
এর আগে এসএমপি নিয়ে মঙ্গলবার গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স সাদাত হোসেন বলেছিলেন, কাস্টমারের জন্য বাজারে সঠিক প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ রাখা দরকার। এটার জন্য যা যা করার দরকার তাতে তো কোনো না নেই। আমাদের অনুরোধ এসএমপি বেশ জটিল একটি বিষয়। এটি প্রথমবারের মতো করা হচ্ছে। এটি চিন্তা-ভাবনা করে, রাইট কনসালটেন্সি করে এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি, উদাহরণ মেনে যদি হয় তাহলে সেটা সঠিক প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
আমরা এফিসিয়েন্সি আর্ন করেছি। কিছুদিন আগেও কি পরিমান ডিফিডেন্ট ঘোষণা করা হয়েছে। জিপি আর্ন করছে, রেভিনিউ শেয়ারিং দিচ্ছে, প্রফিটের উপর ট্যাক্স দিচ্ছে, ডিভিডেন্ট দিচ্ছে। এখন এই এফিসিয়েন্সকে যদি বাধাপ্রাপ্ত করা হয় তাহলে কী হবে?
এই প্রেক্ষাপট ও প্রশ্ন তুলে অপারেটরটির এই কর্মকর্তা বলছিলেন, ‘জিপির গ্রোথ হবে না, গ্রোথ না হলে প্রফিটিবিলি কমে যাবে, এতে ট্যাক্স কমবে এবং ডিভিডেন্ট ঘোষণা কমে যাবে।’
‘এই গ্রামীণ যখন ৩৫ মিলিয়ন গ্রাহক ছিল তখনও লাভজনক ছিল। এখন যাদের ৩৫ মিলিয়ন গ্রাহক রয়েছে তারা কেন প্রফিট করতে পারছে না ? এখন গ্রামীণফোন বড় হয়েছে বলে তাদের জন্য এক রেট হবে আর অন্যদের আরেক রেট হবে-এটা তো স্বচ্ছ হলো না। এটা তো গ্রামীণফোনের অপরাধ না যে, বছর বছর সঠিক সময়ে সঠিক বিনিয়োগ করে এই পর্যন্ত এগিয়ে আসলো’ বলছিলেন সাদাত হোসেন।
তিনি উল্লেখ করছিলেন, ‘জিপি অ্যানুয়্যালি রিপোর্ট করে জানায় কী পরিমাণ ইনভেসমেন্ট করছে। এখন অপারেটরটি বড় হয়ে গিয়েছে, আর বড় হতে দেবো না, তাহলে কী আর ইনভেস্টমেন্ট করবে তারা?’
২০১৮ সালের নভেম্বরের শুরুতে এসএমপি নীতিমালায় অনুমোদন দেয় সরকার। এরপর এটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয় সেই মাসেই।
এতে বলা হয়, বাজারে মোবাইল অপারেটরগুলোসহ এ খাতে লাইসেন্সধারী কোনো কোম্পানিকে এসএমপি ঘোষণায় তার গ্রাহক, রাজস্ব এবং স্পেকট্রামসহ অন্যান্য সম্পদের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
যেখানে কোনো কোম্পানি যদি এর যেকোনো একটি মানদণ্ডে মোট বাজারের ৪০ শতাংশ দখল বা নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে সে এসএমপি হিসেবে বিবেচিত হবে।
কোনো কাজে বাজারে প্রতিযোগিতা কমিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা শুরু করার আগে বিটিআরসি অনুমতির দরকার হবে।সেক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ, ভোক্তাদের সুনির্দিষ্ট কল্যাণ, অন্য প্রতিযোগির অধিকার ক্ষুণ্ণ না করা ও সরকারি নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতি দেখে অনুমতির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে ।
এখানে এসএমপি হিসেবে চিহ্নিত কোম্পানিকে পরবর্তী করণীয় ও বর্জনীয় নিয়ে নির্দেশনা দেয়ার কথা ছিল বিটিআরসি। আর বিটিআরসি সেই কাজই শেষ করে এনেছে।
Comments
Post a Comment